মোঃ আব্দুর রব, সিলেট বিভাগীয় বুরো প্রধান : সিলেটে ২ কোটি টাকার টেন্ডার প্রভাব খাটিয়ে ৫৭ লাখ টাকায় হাতিয়ে নিল একটি আওয়ামী ফ্যাসিস্ট চক্র। এই ঘটনার সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। নেপথ্যে অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়টি এখন উঠে আসছে আলোচনায়।
সম্প্রতি গোয়াইনঘাট উপজেলার বাউরবাগ (বাংলাবাজার) হতে রাণীগঞ্জ গ্রাম পর্যন্ত ডকিনদী, গোয়াইন-পিয়াইন নদী ও চেংগেরখাল নদীর উভয় পাড় নৌপথের ইজারা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ।
এই ইজারার পর প্রক্রিয়া নিয়ে শুরু হয়েছে নানা সমালোচনা। বছর বছর ইজারার মূল্য বৃদ্ধি পেলেও গোয়াইনঘাটে বিআইডব্লিউটিএ এর ইজারা প্রদানের ক্ষেত্রে বিপরীত চিত্র দেখা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে অদৃশ্য আতাঁতে এই ইজারা বাগিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগের দোসর ও জুলাই অভ্যুত্থানে হত্যা মামলার আসামী।
এই চক্রের প্রধান হোতা মনিরুল কবির। এই চক্রের সহযোগী আরও দুই সদস্য হলেন বহুল আলোচিত আওয়ামী লীগ নেতা সুবাস দাস ও মুজিবুর রহমান।
তাদের প্রতিষ্ঠানের নাম মেসার্স এস এল এন্টারপ্রাইজ। ৫ আগষ্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর মামলায় অভিযুক্ত হয়ে এই ২ জন পালিয়ে গেলেও তাদের ম্যানেজার মনিরুল ইসলামকে দিয়ে মাত্র ৫৭ লাখ টাকায় টেন্ডার বাগিয়ে নেয় সুভাষ-মুজিবুর চক্র।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, বিগত ২০২১-২২ অর্থবছরে গোয়াইনঘাট উপজেলার বাউরবাগ (বাংলাবাজার) হতে রাণীগঞ্জ গ্রাম পর্যন্ত ডকিনদী, গোয়াইন-পিয়াইন নদী ও চেংগেরখাল নদীর উভয় পাড় নৌপথের ইজারা মূল্য ছিল ১ কোটি ৬৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
তৎকালীন সময় করোনা পরিস্থিতির কারণে লকডাউনে নৌপথ বন্ধ থাকে। পরে একটি সেতু রক্ষায় নৌচলাচল বন্ধের ঘোষণায় দুই কোটি টাকা ক্ষতি হওয়ার কথা জানিয়ে ইজারার টাকা ফেরত চেয়েছিলো ইজারাদার প্রতিষ্ঠান।
এরপর ইজারাদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স এস এল এন্টারপ্রাইজ ক্ষতি হওয়ার দোহাই দিয়ে বিগত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিনা টেন্ডারে বিআইডব্লিউটিএ এর কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ইজারা ছাড়া খাস কালেকশন আদায় করেন মেসার্স এস এল এন্টারপ্রাইজ।
চলতি বছরে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ বন্দর বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন ঘাট, পয়েন্ট ও খাল টোল স্টেশন সমূহের জন্য ২০২৫-২৬ অর্থ বছরের ইজারা দেওয়া হয়।
কিন্তু দুই বছর পর ইজারা মূল্য বৃদ্ধি না করে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে ৫৭ লাখ টাকার ইজারা ছিনিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগের দোসর মনিরুল সুবাস ও মুজিব।
এই ঘটনার পর বিএনপি পন্থী ব্যবসায়ীদের মধ্যে বিরাজ করছে চরম উত্তেজনা। গত ২৯ এপ্রিল টেন্ডার দেওয়া হয়েছে। এতে করে উক্ত টেন্ডার ৫৭ লাখ টাকায় হাতিয়ে নিয়েছেন জনৈক মনিরুল কবির।
অভিযোগ রয়েছে, এই ইজারা হাতিয়ে নেওয়ার পিছনে কলকাঠি নেড়েছেন জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংসতা চালানো একাধিক মামলার পলাতক আসামী গোয়াইনঘাটের আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা সুবাস দাস ও আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা মুজিবুর রহমান এবং স্থানীয় সাবেক সাংবাদিক এক নেতা।
একটি সূত্র জানিয়েছে, ইজারার ঘটনা প্রকাশের পর বিপাকে পড়েছেন গোয়াইনঘাট আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা সুবাস দাস, আওয়ামী লীগের পলাতক নেতা মুজিবুর রহমান কথিত সাংবাদিক মতিন ও সুভাস মুজিবের ম্যানেজার আওয়ামী লীগের দোসর মনিরুল কবির।
তারা ইজারাটি বাতিল হবে ভেবে ইজারাটি বিক্রির পরিকল্পনা করছেন।
নাম না প্রকাশ করা শর্তে গোয়াইনঘাটের একজন গণমাধ্যমকর্মী জানান, জুলাই ছাত্র-জনতা আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংসতা চালানো একাধিক মামলার পলাতক আসামী গোয়াইনঘাট আওয়ামী লীগের নেতা সুবাস দাস ও আওয়ামী লীগ নেতা মুজিবুর রহমান দেশের থেকে কথিত সাংবাদিক মতিনকে দিয়ে তাদেরই ম্যানেজার ফ্যাসিস্ট দোসর মনিরুল কবিরের মাধ্যমে বালুর ইজারা বাগিয়ে নেয়।
ইজারার বিষয়ে স্থানীয় সাংবাদিকরাও জানেন, তবে মোটা অংকের টাকার আশায় তারাও তা প্রকাশ করেননি!
এ বিষয়ে জানতে মনিরুল কবিরের মুঠোফোনে কল করলে তা বন্ধ দেখায়। সুবাস -মুজিব পলাতক থাকায় সঙ্গত কারণে তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।