যুগের পরিক্রমায় আন্তর্জাতিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত হচ্ছে বাংলাদেশ। সেই সাথে মানুষ তাদের আরাম-আয়েশকে বেশি উপভোগ করতে ইচ্ছুক। তাইতো বর্তমানে শহর, এমনকি গ্রামের হাটবাজারগুলোতে রয়েছে এসি ও নন-এসি সেলুন।
সেসব সেলুন গুলোতে চুল- দাড়ি কাটার জন্য রয়েছে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও মেশিন। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে হারিয়ে যেতে বসেছে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের চুল- দাড়ি কাটার চিত্র। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অন্য অনেক পেশার মতোই নরসুন্দর পেশা প্রায় বিলুপ্তির পথে।
তারপরও কখনও কখনও গ্রামাঞ্চলের পাড়া মহল্লায় এখনো গোবিন্দ বর্মনের মত কিছু ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দর দেখা মিলছে। তাঁরা গ্রামের পাড়া মহল্লার বাড়ি বাড়ি গিয়ে নিম্ন আয়ের মানুষের চুল-দাড়ি কাটছেন।
ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দ গোবিন্দ বর্মনের চুল-দাড়ি কাটার কাস্টমার হচ্ছে গ্রামের পাড়া মহল্লার নিম্ন আয়ের মানুষ জন। শহর ও গ্রামের হাটবাজারগুলোর সেলুন গুলোতে চুল-দাড়ি কাটতে একজন মানুষে ২শত থেকে ৩শত টাকার ও বেশি গুনতে হয়। সেখানে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দ গোবিন্দ বর্মন বাড়ি বাড়ি গিয়ে একজন মানুষের চুল- দাড়ি কাটতে টাকা নেন মাত্র ৬০ টাকা অর্থাৎ চুল কাটতে ৩০টাকা আর দাঁড়ি কাটতে ৩০ টাকা।
বলছি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার কান্দিউড়া ইউনিয়নের তারাকান্দিয়া বাজুপাড়া গ্রামের নরসুন্দর গোবিন্দ বর্মনের কথা। গোবিন্দ একসময় বসবাস করতেন জেলার খালিয়াজুড়ি উপজেলায়, তখন তিনি স্থানীয় বাজারে আব্দুল হামিদ নামে একজনের কাছে চুল- দাড়ি কাটা কাজ শিখেন।
তারপর থেকে গোবিন্দ এই পেশায় যুক্ত রয়েছেন। গোবিন্দ তারাকান্দিয়া বাজুপাড়া গ্রামে বিয়ে করে তার শ্বশুরবাড়িতে স্থায়ী বসবাস করছেন। পরিবারে ৫ জন সদস্য। নরসুন্দর গোবিন্দ বর্মনের আর্থিক অবস্থা খুবই খারাপ। তাই তিনি নিজে কোনো সেলুন দোকান করতে পারছেনা। এজন্য কিছু টাকা ধার-দেনা করে চুল-দাড়ি কাটার যন্ত্রপাতি কিনে পাড়া মহল্লার বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের চুল-দাড়ি খেটে জীবিকা নির্বাহ করছেন।
তারাকান্দিয়া পূর্বপাড়া গ্রামের হুমায়ুন কবির এর বাড়িতে চুল খাটতে গেলে কথা হয় নরসুন্দর গোবিন্দ বর্মনের সাথে। এসময় তিনি জানান, প্রতিজন মানুষ যেখানে সেলুনে চুল কাটতে টাকা লাগে ১/২শত টাকার মত সেখানে গোবিন্দ চুল কাটেন ৩০ টাকার বিনিময়ে।
এমন করে মানুষের চুল-দাড়ি কেটে প্রতিদিন আয় হয় ৪শত থেকে ৫শত টাকার মত। এই টাকা দিয়েই তাঁর সংসার চালাতে হয়। যদিও সবকিছু জিনিসপত্রের দাম বেশি। তাঁর এই টাকা আয়ে সংসার চালাতে কষ্ট হয়। গোবিন্দ এই পেশায় ১২ বছর যাবত যুক্ত রয়েছেন।
ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দ গোবিন্দ বর্মনের কাছে চুল কাটতে আসা হুমায়ুন কবির বলেন, ‘ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে হাটে গিয়ে ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দরদের কাছে চুল কাটাতাম। এখন আমি বাড়িতে বসে চুল কাটাচ্ছি। সেলুনে চুল ও দাড়ি কাটাতে গেলে ১শত থেকে ২শত টাকা লাগে। আর এদের কাছে মাত্র ৩০ থেকে ৬০ টাকায় চুল ও দাড়ি কাটানো যায়। সেলুন আর এদের কাজের মান প্রায় সমান।
একই গ্রামের রহিছ মিয়া, সেলিম মিয়া, সাদেক মিয়া, বলেন, ভ্রাম্যমাণ নরসুন্দ গোবিন্দ বর্মন প্রায় সময় বাড়ি বাড়ি আসে তাই আমরা ভ্রাম্যমাণ এই নরসুন্দরদের দিয়ে চুল-দাড়ি কাটি। তাঁর কাছে অনেক কম টাকায় চুল-দাড়ি কাটানো যায়। সে ভালো চুল-দাড়ি কাটে।
এবিষয়ে কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মো.লাইমুন হোসেন ভুঁইয়া বলেন, একসময় বাজারে সেলুন ছিলনা। গাছের নিচে টুলে বসে চুল-দাড়ি কাটাহত। এখন দেশ উন্নত হচ্ছে তাই বদলে গেছে চুল-দাড়ি কাটার আগের দৃশ্য। কিন্তু সমাজে এখনো নরসুন্দ গোবিন্দ বর্মনের মত অসংখ্য নরসুন্দ রয়েছেন। যাদের জীবন মানের উন্নয়ন হয়নি। বর্তমান সরকার এই শ্রেণী পেশার মানুষের দিকে সুদৃষ্টি দিলে তাঁরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।