নীলফামারী প্রতিনিধি:
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি ঘোষিত ‘রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের ৩১ দফা’ রূপরেখার সফল বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে সারাদেশব্যাপী ধারাবাহিক কর্মসূচির অংশ হিসেবে আজ নীলফামারী জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হলো এক গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক কর্মশালা।
এই কর্মশালার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি, তৃণমূল পর্যায়ে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামো আরও শক্তিশালী করা এবং ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রতিষ্ঠা ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি’ বাস্তবায়নের কৌশল নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা হয়।
কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতা ইসমাইল জবিউল্লাহ। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, সাবেক হুইপ শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী এবং কেন্দ্রীয় মহিলা দলের নেত্রী রাশেদা বেগম হীরা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির নীলফামারী জেলা আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম সদস্য মিসেস নেওয়াজ হালিমা আরলী। এছাড়া কর্মশালায় আরও উপস্থিত ছিলেন মোছা. শাম্মী আক্তার, আতিকুর রহমান রুমন, ইকবাল হোসেন শ্যামল, সাইফ মোহাম্মদ জুয়েলসহ জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন নেতাকর্মী।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ১৩ জুলাই ২০২৩, ভার্চুয়াল মাধ্যমে “রাষ্ট্র মেরামতের ৩১ দফা” জাতির সামনে উপস্থাপন করেন। এই দফাগুলোর মধ্য দিয়ে বর্তমান দুঃশাসন, দমন-পীড়ন, দুর্নীতি ও রাজনৈতিক সংকট থেকে জাতিকে রক্ষা করে একটি ন্যায়ভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমুখী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা তুলে ধরা হয়েছে।
৩১ দফার মধ্যে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দফাগুলো হলো—
জাতীয় পুনর্মিলন কমিশন গঠন,
বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা,
নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন,
দারিদ্র্য দূরীকরণ ও অর্থনৈতিক বৈষম্য হ্রাস,
শিক্ষার আধুনিকীকরণ ও মেধা উন্নয়ন,
যুব উন্নয়ন,
তথ্য প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট স্বাধীনতা,
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা,
প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা,
কৃষি ও পল্লী উন্নয়ন,
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা খাতের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ,
প্রশাসনিক সংস্কার ও দুর্নীতি দমন ইত্যাদি।
ইসমাইল জবিউল্লাহ বলেন, “বর্তমান সরকারের আমলে দেশে আইনের শাসন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মৌলিক অধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছে। বিএনপির ৩১ দফা শুধু একটি রাজনৈতিক দলীয় রূপরেখা নয়, এটি একটি জাতীয় পুনর্জাগরণের ঘোষণা।”
শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী বলেন, “সরকার মানুষের ভোটাধিকার হরণ করেছে। গণতন্ত্রকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে। আমরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শক্তি দিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলব।”
রাশেদা বেগম হীরা বলেন, “নারীদের অধিকার, মর্যাদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে রাষ্ট্রকে নতুন করে সাজাতে হবে।”
এই কর্মশালার মাধ্যমে নেতৃবৃন্দ তৃণমূল নেতাকর্মীদের রাষ্ট্র মেরামতের দফাগুলোর ব্যাখ্যা দেন এবং সেগুলোর প্রতি আনুগত্য ও প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। কর্মশালায় বিএনপির নেতারা দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম জোরদার করার পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে ব্যাপক গণসংযোগ ও প্রচার চালানোর আহ্বান জানান।
নীলফামারীর এ কর্মশালায় বিএনপির ৩১ দফার বাস্তবায়ন নিয়ে নেতৃবৃন্দ যে ঐক্যবদ্ধ বার্তা দিয়েছেন, তা আগামীর রাজনীতিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। জনগণের মৌলিক অধিকার পুনরুদ্ধার, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও একটি সুশাসিত রাষ্ট্র গঠনে এই কর্মশালা প্রেরণাদায়ক হিসেবে কাজ করবে—এমনটাই প্রত্যাশা নেতাকর্মীদের।