ডালিয়া হালদার, ববি প্রতিনিধিঃ
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শুচিতা শরমিনের পদত্যাগের দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে এতে অংশ নেন শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের একাংশও। এসময়, দাবি আদায় না হলে দক্ষিণবঙ্গকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার হুঁশিয়ারি দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১২ মে) বেলা ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের নিচতলায় অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। পরে দুপুর ২টায় ক্যাম্পাস থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে ঢাকা-কুয়াকাটা মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে। মিছিলে প্ল্যাকার্ড হাতে শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দেন।
মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শুজয় শুভ বলেন, “এ দায় প্রধান উপদেষ্টার, শিক্ষা উপদেষ্টার নাকি অন্য কারো—তা তারা বুঝুক। যদি আগামীকাল (১৩ মে) দুপুর ২টার মধ্যে এই ফ্যাসিস্ট উপাচার্য পদত্যাগ না করেন, তাহলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা চাইলে গোটা দক্ষিণবঙ্গকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে পারে। আমরা ১টা ৫৯ পর্যন্ত অপেক্ষা করব। আমরা কারো ভোগান্তির কারণ হবো না। প্রয়োজনে ২টা থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য দক্ষিণবঙ্গ বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।”
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী রাকিন খান বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো সন্তোষজনক বার্তা দেয়নি। তাই আমরা ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিচ্ছি। এর মধ্যে দাবি মেনে না নিলে সড়ক অবরোধসহ কঠোর কর্মসূচি পালনে বাধ্য হবো। তবে আমরা জনভোগান্তির পক্ষপাতী নই।”
ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী মোশাররফ হোসেন বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিলাম। তারই ধারাবাহিকতায় আগামীকাল দুপুর ২টা পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের আল্টিমেটাম দেওয়া হয়েছে। আমরা চাই, আমাদের যৌক্তিক দাবি মেনে নেওয়া হোক। তা না হলে দক্ষিণবঙ্গকে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার মতো কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে আমরা বাধ্য হবো, ইনশাআল্লাহ। তবে আমরা কোনোভাবেই জনদুর্ভোগ চাই না। আশা করি প্রশাসন সময়মতো সিদ্ধান্ত নেবে।”
উল্লেখ্য, একই দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের গতকাল দেওয়া ঘোষণা অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ে কমপ্লিট শাটডাউন চলমান রয়েছে । এতে ফাইনাল পরীক্ষা ছাড়া বন্ধ রয়েছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল কার্যক্রম।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মহসিন উদ্দিন,কোস্টাল স্টাডিজ এন্ড ডিজেস্টার ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক, হাফিজ আশরাফুল হক,লোক প্রশাসন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সিরাজিস সাদিক, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এটিএম রফিকুল ইসলাম,সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক মোস্তাকিম মিয়া,মৃত্তিকা ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী শুজয় শুভ ও মাসুম বিল্লাহ, মার্কেটিং বিভাগের এমডি শিহাব, বাংলা বিভাগের আশিকুর রহমান, সমাজবিজ্ঞান বিভাগের নিশাত মালিহা ঐশী, ইতিহাস বিভাগের মোশাররফ হোসেন, লোকপ্রশাসন বিভাগের মোকাব্বেল শেখ, আইন বিভাগের শহিদুল ইসলাম শাহেদ ও এসএম ওয়াহিদুর রহমান, ইংরেজি বিভাগের রাকিন খান এবং অর্থনীতি বিভাগের ভূমিকা সরকার প্রমুখ।
উপাচার্য ড. শুচিতা শরমিন বলেন, “বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় দক্ষিণাঞ্চলের বাতিঘর, এর সম্মান অক্ষুণ্ন রাখা সবার দায়িত্ব। আমি বারবার শিক্ষার্থীদের বলছি—ভুল থেকে ফিরে আসো। কিছু স্বার্থান্বেষী মহল শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করছে। প্রফেসর ইউনুসর জুলাইকে ঘিরে যে ভাবনা ছিল, তার প্রেক্ষিতেই আমাকে নারী উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আসার পর থেকেই আমি বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের শিকার হচ্ছি।শিক্ষার্থীদের সব দাবি ইতোমধ্যে সিন্ডিকেটে সর্বসম্মতভাবে মেনে নেওয়া হয়েছে। এখন যে দাবি তোলা হচ্ছে, তার কোনো ভিত্তি নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি বুঝবে, আশা করি সবাই ব্যক্তি স্বার্থ নয়, দেশের স্বার্থকে অগ্রাধিকার দেবে।”