নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
উত্তরাঞ্চলের স্বাস্থ্যখাতের দীর্ঘ অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার ভিড়ে আশার নতুন আলো জ্বালাতে যাচ্ছে নীলফামারী। জেলার মাটিতে চীনের অর্থায়নে ১০০০ শয্যার আন্তর্জাতিক মানের একটি আধুনিক হাসপাতাল নির্মাণের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আজ মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) সকাল ১১ টার সময় সম্ভাব্য জমি পরিদর্শনে আসেন রংপুর বিভাগের বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ড. হারুন অর রশিদ ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান।
এ সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও সরকারি কর্মকর্তাদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) নীলফামারী জেলা শাখার সভাপতি আ. খ. ম আলমগীর সরকার, এছাড়াও অন্যান্য রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এবং স্থানীয় জনতা।
স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, “আমার বাবা স্ট্রোকে মারা গিয়েছিলেন রংপুরে পৌঁছানোর আগেই। যদি নীলফামারীতে আধুনিক হাসপাতাল থাকত, হয়তো তিনি বেঁচে যেতেন।”
হাসপাতালের আশার খবরে আবেগাপ্লুত এক গৃহবধূ আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, “আমরা চিকিৎসার জন্য ঢাকায় যেতে পারি না, টাকার অভাবে বাচ্চাদের ভালো চিকিৎসা করাতে পারি না। এই হাসপাতাল আমাদের জন্য বাঁচার একটা সুযোগ।”
রংপুর বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ড. হারুন অর রশিদ “এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে রংপুর বিভাগের স্বাস্থ্যসেবার মান পুরোপুরি বদলে যাবে। এটি হবে আধুনিক চিকিৎসা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের কেন্দ্র।”
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নায়িরুজ্জামান বলেন, জমি নির্বাচন প্রায় শেষ পর্যায়ে এবং অচিরেই প্রকল্প অনুমোদনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রক্রিয়া শুরু হবে।
বিএনপি জেলা সভাপতি আ. খ. ম আলমগীর সরকার বলেন, “স্বাস্থ্য খাত রাজনৈতিক বিভাজনের বিষয় নয়। জনগণের কল্যাণে আমরা এই প্রকল্পের পাশে আছি। সরকারের উদ্যোগ সফল হোক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।”
বিশ্লেষকরা বলছেন, এক যুগে এটাই প্রথম কোনো বড় প্রকল্প যেখানে প্রশাসন ও বিরোধী রাজনৈতিক দল এক মঞ্চে উপস্থিত থেকে জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছে। এটি রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্যও একটি ইতিবাচক বার্তা।
ডঃ মোঃ আব্দুর রাজ্জাক সিভিল সার্জন নীলফামারী জানান, “এই হাসপাতাল শুধু চিকিৎসা নয়, একটি অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি তৈরিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। কর্মসংস্থান, ওষুধ শিল্প, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান—সবই আসবে এর চারপাশে।”
স্থানীয় উদ্যোক্তারা ইতিমধ্যে হাসপাতালকে কেন্দ্র করে সম্ভাব্য ব্যবসায়িক বিনিয়োগ নিয়ে ভাবনা শুরু করেছেন।